skip to main |
skip to sidebar
টাইগার টিমে ফেরার অপেক্ষায় যে ক্রিকেটার
অপেক্ষার শেষ কবে জানা নেই। তবু স্লোগান, ‘সংগ্রাম চলছে, চলবে।’
স্লোগানটা মুখে কেউ না দিলেও মনের ভেতর নিত্য গর্জে উঠছে। সংগ্রাম নিজেকে
ফিরে পাওয়ার, সংগ্রাম জাতীয় দলে ফেরার।
জাতীয় দলে কিছুদিন আগেও তাঁরা ছিলেন নিয়মিত মুখ। কখনো মাশরাফি বিন
মুর্তজার সঙ্গে, কখনো রুবেল হোসেনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন পেস বোলিংয়ে। অথচ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশের পেসারদের সুবর্ণ সময় চলছে, তখনই
তাঁরা দর্শক! জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পর্কটা সীমিত হয়ে পড়েছে মাঝে মাঝে
নেটে এসে বোলিং করার মধ্যে।
শফিউল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও আল আমিন হোসেন। বল হাতে প্রত্যেকেই কখনো
সফল, কখনো বাংলাদেশ দলকে দিয়েছেন আলোর দিশা। আল আমিন তো এসেই দলে নিজের
অপরিহার্যতা প্রমাণ করে ফেলেন। অথচ এই তিন পেসারের কে কবে সর্বশেষ
আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন, সেটা খুঁজতে একটু বেশিই পেছন ফিরে যেতে হচ্ছে।
গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর জাতীয় দলের হয়ে আর
কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি আল আমিন ও শফিউলের। রবিউল তো ওই বছরের
আগস্ট-সেপ্টেম্বরে হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর থেকেই দলের বাইরে।
দলে ফেরার লড়াইটা অবশ্য একসঙ্গেই চালাচ্ছেন তিন পেসার। কোচ সরওয়ার
ইমরানের তত্ত্বাবধানে মিরপুরের একাডেমি মাঠে প্লেয়ার্স অব ন্যাশনাল
ইন্টারেস্ট গ্রুপ ‘পনি’র অধীনে শুভাগত হোম চৌধুরী, আরাফাত সানি ও মোহাম্মদ
মিঠুনের সঙ্গে চলছে তাঁদেরও ফিটনেস এবং দক্ষতার অনুশীলন। একেকজনের ক্ষেত্রে
কোচের কাজ একেক রকম। রবিউলের বোলিং অ্যাকশনে যেমন সামান্য পরিবর্তন এনেছেন
ইমরান। আল আমিনের মূল চেষ্টা বলের গতি ঘণ্টায় ১৩০-১৩৫ থেকে ১৩৫-১৪০
কিমিতে নিয়ে যাওয়া। লাইন-লেংথ ঠিক রাখার সঙ্গে শফিউল চাইছেন দুই দিকেই
সুইংটা আরও নিখুঁত করতে।
দূর থেকে দেখা জাতীয় দলের সাফল্য শফিউল, রবিউল, আল আমিনদের মনেও
আনন্দের ঢেউ তোলে। বিশেষ করে পেসাররা যে এখন ঘরের মাঠেও প্রতিপক্ষ
ব্যাটসম্যানদের বিষদাঁতে বিঁধতে পারছেন, সেটি দেখে তাঁরা বেশি খুশি। এসেই
হইচই ফেলে দেওয়া তরুণ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে তো রীতিমতো
উচ্ছ্বসিত তাঁর সাতক্ষীরার অগ্রজ রবিউল, ‘মুস্তাফিজের কাটারে টার্ন,
বাউন্স, গতি তিনটিই আছে। এটাই ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করে দেয়। দুই-তিন
দিন আগেও ওর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বলেছি, ‘যত প্র্যাকটিস করবি ততই এই
জিনিসগুলো আরও ভালো হবে।
এই উচ্ছ্বাস অবশ্য বেশিক্ষণ থাকে না। জাতীয় দলের সাফল্যস্রোতে নিজেকে
আবিষ্কার করতে না পেরে হতাশায় ছেয়ে যায় মন। ‘একবার জাতীয় দলে খেলে
ফেলার পর দলের বাইরে থাকা কখনোই আনন্দদায়ক নয়। সব সময়ই এটা মিস
করি’—মুঠোফোনে বলছিলেন রবিউল।
শফিউলের আক্ষেপ, এমন সুসময়ে দলের অংশ হয়ে থাকতে না-পারা, ‘জাতীয় দলের
আবহটা আমি খুবই মিস করছি। মনে হয় দলে থাকলে তো এসব সাফল্যে আমারও অবদান
থাকত।’ আল আমিনের অনুভূতিটা একটু ভিন্ন, ‘বাংলাদেশের জয়ের অংশ হতে পারলে
সব সময়ই ভালো লাগে। তারপরও দল যে সাফল্য পাচ্ছে তাতেই আমি খুশি।’ তবে
সমস্যা একটা তাঁরও আছে, ‘দলের বাইরে থাকলে দর্শক, ভক্ত বা পরিবারের লোকেরাও
অনেক সময় অনেক কথা বলে। তখন খারাপ লাগে।
চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় দলে ফেরার লড়াই চালিয়ে গেলেও কাজটা কত কঠিন,
তা ভালোই জানেন রবিউল, শফিউল, আল আমিনরা। জাতীয় দল ও জাতীয় দলের বাইরে
মিলে নির্বাচকদের হাতে এখন ৮-১০ জন পেসার। দলে জায়গা করে নেওয়ার
প্রতিদ্বন্দ্বিতাটাও তাই তীব্র। তবে নিজেদের মধ্যে এই লড়াইটা সবার চোখেই
ইতিবাচক। রবিউলের ভাষায়, ‘দলে ফিরতে হলে এখন কষ্ট করে ফিরতে হবে। এতে আমরা
মানসিকভাবে আরও শক্ত হব। শফিউল বলছিলেন, ‘এটা সবার জন্যই চ্যালেঞ্জ। সবাই
এখন জান দিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। সেটা দলের জন্যও ভালো।
বাস্তবতা মেনে নিয়ে আল আমিনও আছেন সুযোগের অপেক্ষায়, কখন সুযোগ আসবে
কেউ জানে না। আমার কাজ হলো নিজেকে প্রস্তুত রাখা। আজ ডাকলে যেন কালই খেলতে
নামতে পারি।
বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সাফল্যেরই উপজাত ঘরের ভেতরের এই
প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মাঠে যেমন বাড়ছে সাফল্যক্ষুধা, মাঠের বাইরেও বাড়ছে
জয়ের মঞ্চে ওঠার তাড়না।
0 comments:
Post a Comment